ফিকহ অংশ
উত্তর: ত্বহারাত (পবিত্রতা): এটি হচ্ছে অপবিত্রতা দূর করা এবং নাপাকী বিলুপ্ত হওয়া।
নাপাকী থেকে পবিত্রতা: এটি হচ্ছে: কোন মুসলিম কর্তৃক তার শরীর, কাপড়, জায়গা অথবা তার সালাত আদায়ের স্থানে পতিত নাপাকীকে দূরা করা।
অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা: এটি পবিত্র পানি দ্বারা অযু বা গোসল অথবা যে পানি পায় না বা পানি ব্যবহারে অপারগ হয়, তার জন্য তায়াম্মুমের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
উত্তর: নবী আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম বলেছেন: «إذا توضأ العبد المسلم» - أو «المؤمن»- «فغسل وجهه؛ خرج من وجهه كل خطيئةٍ نظر إليها بعينيه مع الماء» - أو «مع آخر قطر الماء» - «فإذا غسل يديه؛ خرج من يديه كل خطيئة كان بطشتها يداه مع الماء» -أو «مع آخر قطر الماء» - «فإذا غسل رجليه؛ خرجت كل خطيئة مشتها رجلاه مع الماء» -أو «مع آخر قطر الماء» - «حتى يخرج نقيا من الذنوب». “যখন কোনো মুসলিম কিংবা কোনো মুমিন বান্দা অযু করে অতঃপর সে তার চেহারা ধৌত করে, তখন তার চেহারা হতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে সে সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যার দিকে তার দু’চোখের দৃষ্টি পড়েছিল। আর যখন সে তার দু’হাত ধৌত করে, তখন দু’হাত থেকে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে সেসব গুনাহ বের হয়ে যায় যেগুলো তার দু’হাত করেছিল। অতঃপর যখন সে তার দু’পা ধৌত করে তখন তার দু’পা থেকে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে সেসব গুনাহ বের হয়ে যায় যেগুলোর দিকে তার দু’পা অগ্রসর হয়েছিল। ফলে (অযুর শেষে) লোকটি সমুদয় গুনাহ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে যায়।” এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
উত্তর: হাতের কব্জি তিনবার ধোয়া।
তিনবার করে কুলি করবে, তিনবার নাকে পানি দিবে এবং তিনবার নাক ঝেঁড়ে ফেলবে।
কুলি করা: মুখের মধ্যে পানি নিয়ে, তা ঘোরানো-ফিরানো এবং নড়াচড়া করিয়ে ফেলে দেওয়া।
নাকে পানি দেওয়া: ডান হাতের সাহায্যে নাকের মধ্যে বাতাসের মাধ্যমে পানি প্রবেশ করিয়ে টেনে নেওয়া।
নাক ঝাঁড়া: নাকে পানি দেওয়ার পরে বাম হাতের সাহায্যে নাক থেকে পানি বের করে ফেলা।
তারপরে চেহারা তিনবার ধোয়া।
তারপরে দুই হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধোয়া।
তারপরে হাত সামনে থেকে পিছনে এবং পিছন থেকে সামনে নিয়ে মাথা মাসেহ করা ও দুই মাসেহ করা।
তারপর টাখনু পর্যন্ত দুই পা তিনবার ধুইবে।
অযুর পূর্ণতা এমনই। বুখারী ও মুসলিমে বিদ্যমান একাধিক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সাব্যস্ত হয়েছে, যা উছমান ও আব্দুল্লাহ ইবনু যাইদসহ অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন। বুখারী ও অন্যান্য কিতাবে আরো সাব্যস্ত সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে: "أنه توضأ مرة مرة، وأنه توضأ مرتين مرتين" بمعنى: أنه يغسل كل عضو من أعضاء الوضوء مرة، أو مرتين.“রাসূল (সা.) একবার একবার করে অযু করে করেছেন, আবার দুইবার দুইবার করে অযু করেছেন।” অর্থাৎ তিনি তার অযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের প্রতিটি অঙ্গকে একবার অথবা দুইবার করে ধৌত করেছেন।
উত্তর: যে কাজগুলোর কোন একটি বাদ গেলে একজন মুসলিমের অযু শুদ্ধ হয় না।
১. মুখ ধোয়া, কুলি করা এবং নাকে পানি দেওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত।
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া।
৩. মাথা মাসেহ করা, কান এর অন্তর্ভুক্ত।
৪. টাখনু পর্যন্ত দুই পা ধোয়া।
৫. অঙ্গসমূহের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, যেমন: মুখ ধোয়া, তারপর দুইহাত, তারপর মাথা মাসেহ করা এবং তারপর দুই পা ধোয়া।
৬. নিরবিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা: অযুর ক্ষেত্রে এটি হচ্ছে কোন ধরণের বিচ্ছিন্নতা ছাড়া লাগাতার সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা, যাতে অঙ্গসমূহ পানি থেকে শুকিয়ে না যায়।
- যেমন: কোন এক সময়ে অর্ধেক অযু করা, আর অন্য সময়ে তা পূর্ণ করা। এতে উক্ত ব্যক্তির অযু সঠিক হবে না।
উত্তর: অযুর সুন্নাতসমূহ: এগুলো হচ্ছে, যদি অযুকারী তা করে, তাহলে বেশী বিনিময় ও সাওয়াব পাবে। আর যদি ছেড়ে দেয়, তাহলে তার কোন গুনাহ হবে না এবং তার অযু সহীহ।
১. তাসমিয়াহ: বিসমিল্লাহ বলা।
২. মিসওয়াক করা।
৩. হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
৪. আঙ্গুল খিলাল করা।
৫. অঙ্গসমূহকে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার ধোয়া।
৬. ডানদিক থেকে শুরু করা।
৭. অযুর পরে দু‘আ (যিকর) করা: أشْهَدُ أنْ لا إلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، وأشهدُ أنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনিই একক যার কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।”
৮. অযুর পর দুই রাকাত সালাত আদায় করা।
উত্তর: ১. মোজাদ্বয় পবিত্র অবস্থা তথা অযুর পরে পরতে হবে।
২- মোজা পবিত্র হতে হবে। সুতরাং নাপাক মোজার ওপর মাসেহ করা শুদ্ধ হবে না।
৩. অযুতে ধোয়া ফরয, এমন অংশটি মোজা দ্বারা ঢাকা থাকতে হবে।
৪. মাসেহটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হতে হবে, যথা: মুসাফির নয় এমন মুকিমের জন্য: একদিন ও একরাত, আর মুসাফিরের জন্য: তিনদিন ও তিনরাত।
উত্তর: ১- মুসলিম হওয়া: সুতরাং কাফির ব্যক্তির সালাত শুদ্ধ নয়।
২- বিবেক সম্পন্ন হওয়া: পাগলের সালাত শুদ্ধ নয়।
৩- ভালো-মন্দের পার্থক্য করার ক্ষমতা থাকা: সুতরাং ছোট মানুষ (নাবালক) যার ভালো মান্দের বিচার শক্তি নেই, তার ওপর সালাত ফরয নয়।
৪- নিয়ত করা।
৫- ওয়াক্ত হওয়া
৬- অপবিত্রতা দূর করে পবিত্রতা অর্জন করা।
৭- নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করা।
৮- সতর ঢাকা।
৯- কিবলামুখী হওয়া।
উত্তর: মোট চৌদ্দটি রুকন, যেমন:
১। সক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরয সালাতে দন্ডায়মান হওয়া।
২। তাকবীরে তাহরীমা বলা, আর তা হচ্ছে: “আল্লাহু আকবার”।
৩। সূরা ফাতিহা পড়া।
৪। রুকু করা: রুকুর সময় পিঠ সমান রাখা অবস্থায় টান টান রাখবে এবং মাথাকে তার বরাবর রাখবে।
৫। রুকু থেকে উঠা।
৬। দাঁড়ানো অবস্থায় স্থীর হওয়া।
৭। সিজদা করা: স্বীয় কপাল, নাক, দুই হাতের তালু, দুই পায়ের আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগ জমিনে তার সিজদার স্থানে রাখা।
৮। সিজদা থেকে উঠা।
৯। দুই সিজদার মাঝখানে বসা।
আর সুন্নাহ হচ্ছে: (মুসল্লী) তার বাম পায়ের উপরে ইফতিরাশী বৈঠক করবে, আর ডান পা উচু করে রাখবে এবং তা কিবলামূখী করে রাখবে।
১০। ধীরস্থিরতা: এটি হচ্ছে: প্রতিটি কর্ম সংক্রান্ত রুকনে স্থীরতা অবলম্বন করা।
১১। শেষ তাশাহহুদ পাঠ করা।
১২। তাশাহহুদের জন্য বসা।
১৩। দুই সালাম দেওয়া: এটি হচ্ছে: “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বাক্যটি দুইবার বলা।
১৪। রুকনসমূহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা- যেমনটি আমরা উল্লেখ করেছি-। সুতরাং যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রুকুর আগে সিজদা করে, তাহলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি ভুলে করে, তাহলে তাকে অবশ্যই রুকুতে ফিরে যেতে হবে এবং তারপর সিজদা করবে।
উত্তর: সালাতের ওয়াজিব আটটি, যেমন:
১- তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত সকল তাকবীর।
২- ইমাম ও একাকী সালাত আদায়কারী উভয়ের ক্ষেত্রে “সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” (سمع الله لمن حمده) বলা।
৩- “রব্বানা- ওয়া লাকাল হামদ” (ربنا ولك الحمد) বলা।
৪- রুকুতে কমপক্ষে একবার “সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম” (سبحان ربي العظيم) বলা।
৫- সিজদাতে কমপক্ষে একবার “সুবহানা রব্বিয়াল ‘আলা” (سبحان ربي الأعلى) বলা।
৬- দুই সিজদার মাঝখানে “রব্বিগফিরলী” (رب اغفر لي) বলা।
৭- প্রথম তাশাহহুদ।
৮- প্রথম তাশাহুদের জন্য বসা:
উত্তর: সালাতে সুন্নাহ এগারোটি, যেমন:
১- তাকবীরে তাহরিমার পরে سبحانك اللهم وبحمدك، وتبارك اسمك، وتَعَالَىٰ جدك، ولا إله غيرك “হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আপনার নাম কতইনা বরকতময়, আপনার সম্মান কতইনা উর্ধ্বে, আপনি ছাড়া কোন [প্রকৃত] ইলাহ নেই।” একে ইস্তিফতাহ (সূচনা)-এর দু‘আ বলা হয়।
২- তা‘আউয়ুয (আ‘ঊযুবিল্লাহ) পড়া।
৩- বিসমিল্লাহ পড়া।
৪- ‘আমীন” বলা।
৫- সূরা ফাতিহার পরে অন্য একটি সূরা পড়া।
৬- ইমামের জন্য কিরাআত জোরে পড়া।
৭- রুকু থেকে উঠে সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলার পরে "ملء السَّمٰوات، وملء الأرض، وملء ما شئت من شيء بعد" (আপনার প্রশংসা) আসমানসমূহ পূর্ণ, যমীনসমূহ পূর্ণ, এর পরেও আপনি যে সমস্ত বস্তু চান, সেসবও পূর্ণ।” এ দু‘আ পড়া।
৮- রুকুতে একবারের অতিরিক্ত তাসবীহ তথা: দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার তাসবীহ পড়া, এবং এর থেকে বৃদ্ধি।
৯- একবার থেকে সিজদাতে অতিরিক্ত তাসবীহ পড়া।
১০- দুই সিজদার মাঝখানে “রব্বিগফিরলী” (رب اغفر لي) একাধিকবার পড়া।
১১- শেষ বৈঠকে নবী ও তার পরিবার-পরিজন আলাইহিমুস সালামের জন্য শান্তি ও বরকতের জন্য দু‘আ (দরুদ) করা এবং এর পরে অন্যান্য দু‘আ (দু‘আ মাছুরা) পড়া।
চতুর্থত: কর্ম সংক্রান্ত সুন্নাহ, একে অবস্থাগত সুন্নাহ বলা হয়:
১- তাকবীরে তাহরিমার সাথে রফ‘উল ইয়াদাইন (দুই হাত উত্তোলন) করা।
২- রুকুর সময়ে (হাত উত্তোলন)।
৩- রুকু থেকে উঠার সময়ে (হাত উত্তোলন) করা।
৪- উভয় অবস্থায় এর পরে হাত নামিয়ে ফেলা।
৫- ডানহাতকে বামহাতের উপরে রাখা।
৬- সিজদার স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা।
৭- দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝখানে ফাঁকা রাখা।
৮- আঙ্গুলগুলো ফাঁকা রেখে রুকুতে দুই হাত দ্বারা দুই হাঁটু ধরে রাখা এবং পিঠ সোজা রেখে মাথা তার বরাবর রাখা।
৯- সিজদার অঙ্গসমূহ মাটিতে রাখা এবং সিজদার স্থান সরাসরি জমিনে রাখা।
১০- সিজদার সময়ে দুই পার্শ্ব থেকে দুই বাহুকে, পেটকে উরুদ্বয় থেকে এবং উরুদ্বয়কে দুই গোছা থেকে আলাদা রাখা। আবার দুই হাঁটুর মধ্যে ফাঁকা রাখা, পা দুটিকে দাঁড় করিয়ে রাখা, আবার পায়ের আঙ্গুলসমূহের ভিতরের দিক যমীনের উপরে আলাদা আলাদা রাখা আর আঙ্গুলসমূহ বন্ধ রেখে হাত দুটিকে কাঁধ বরাবর বিছিয়ে রাখা।
১১- দুই সিজদার মাঝখানে এবং প্রথম তাশাহহুদের বৈঠকে ইফতিরাশী বৈঠক করা আর দ্বিতীয় বৈঠকে তাওয়াররুক করা।
১২- দুই সিজদার মাঝখানে আঙ্গুলসমূহকে বন্ধ রেখে উরুদ্বয়ের উপরে হাত দুটিকে বিছিয়ে রাখা। অনুরূপভাবে তাশাহহুদের মধ্যেও, তবে তাশাহহুদের ক্ষেত্রে ডানহাতের মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলিকে গোল করে কনিষ্ট ও অনামিকা আঙ্গুলদ্বয় বন্ধ রেখে শাহাদাত আঙ্গুলের মাধ্যমে ইশারা করতে হবে।
১৩- সালামের সময়ে ডানে বামে মুখ ঘোরানো।
উত্তর: সালাত আদায়ের পদ্ধতি:
১- কোন দিকে ঘোরা বা তাকানো ব্যতীত সমস্ত শরীরকে কিবলামুখী করা।
২- মুখে নিয়ত উচ্চারণ করা ছাড়া, যে সালাত আদায় করতে ইচ্ছুক, অন্তরে সেই সালাত আদায়ের নিয়ত করা।
৩- তারপরে তাকবীরে তাহরীমা তথা “আল্লাহু আকবার” বলবে। এবং দুই হাত তাকবীরের সময় কাঁধ বরাবর উত্তোলন করবে।
৪- তারপরে ডান হাতের তালু তার বাম হাতের কব্জির উপরে রেখে বুকের উপরে বাঁধবে।
৫- তারপরে ইস্তিফতাহ (সূচনার) দু‘আ পড়বে: «اللهمَّ باعِدْ بينِي وبينَ خَطايايَ كما باعَدتَّ بينَ المشرقِ والمَغرب، اللهمَّ نقِّني من خطايايَ كما يُنقَّى الثَّوبُ الأبيضُ منَ الدَّنَس، اللهمَّ اغسِلْنِي من خَطَايايَ بالثَّلجِ والماءِ والبَرَد». “হে আল্লাহ্! আমার এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান করে দিন যেমন ব্যবধান করেছেন পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ্ আমাকে আমার গুনাহ হতে এমনভাবে পবিত্র করুন যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ্ আমার গোনাহকে বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দিন।”
অথবা বলবে: «سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُكَ، وَلاَ إِلَهَ غَيْرك» “হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করি, আপনার নাম কতইনা বরকতময়, আপনার সম্মান কতইনা উর্ধ্বে, আপনি ছাড়া কোন [প্রকৃত] ইলাহ নেই।”
৬- তারপরে তা‘আউয বলবে: তথা «أعوذ بالله من الشيطان الرجيم» “আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।” ৭- তারপরে বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতিহা করবে: بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে (১) الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ “সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই প্ৰাপ্য। (২) الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ “পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।” (৩) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ “বিচার দিবসের মালিক।”(৪) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ “আমরা শুধু আপনারই ‘ইবাদাত করি, এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” (৫) اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ “আমাদেরকে সরল-সুদৃঢ় পথের হিদায়াত দিন।” (৬) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ “তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নি‘আমাত দিয়েছেন, যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।” (৭) [আল-ফাতিহা: ১-৭]
তারপরে সে বলবে: “আমীন।” হে আল্লাহ, আপনি কবুল করুন।
৮- তারপর কুরআনের যেখান থেকে সহজ, তা পাঠ করবে। এবং ফজরের সালাতে কিরাআত দীর্ঘ করবে।
৯- তারপরে রুকু করবে, অর্থ্যাৎ: আল্লাহ তা‘আলার সম্মানার্থে পিঠ ঝুকিয়ে দেবে, রুকুর সময়ে তাকবীর বলবে, আর তার দুই হাত কাঁধ বরাবর উত্তোলন করবে। আর সুন্নাহ হচ্ছে: সে তার পিঠকে সোজা করবে, মাথাকে পিঠের বরাবর রাখবে এবং আঙ্গুলগুলো আলাদা রেখে তার দুই হাঁটুর উপরে তার হাতদ্বয় রাখবে।
১০- এরপর রুকুতে বলবে: “সুবহানা রব্বিয়াল ‘আযীম” (তিনবার), আর যদি দু‘আ হিসেবে “সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী” বৃদ্ধি করে, তবে তা উত্তম।
১১- এরপরে রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময়ে বলবে: “সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” (سمع الله لمن حمده), এবং তার দুইহাত এ সময়ে কাঁধ বরাবর থাকবে। মুক্তাদী “সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবে না, এর পরিবর্তে সে বলবে: “রব্বানা- ওয়া লাকাল হামদ” (ربنا ولك الحمد)।
১২- তারপরে রুকু থেকে উঠে ربنا ولك الحمد، ملء السماوات والأرض، وملء ما شئت من شيء بعد [রব্বানা ওয়া লাকাল হামদ, মিল-আস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া মিল-আ মা শি‘তা মিম বা‘দু] “(আপনার প্রশংসা) আসমানসমূহ পূর্ণ, যমীনসমূহ পূর্ণ, এর পরেও আপনি যে সমস্ত বস্তু পরিমাণ চান, সেসবও পূর্ণ।” এ দু‘আ পড়বে।
১৩- তারপরে প্রথম সিজদা করবে, তার সিজদাতে (যাওয়ার সময়) বলবে: “আল্লাহু আকবার”। সাতটি অঙ্গের উপর সিজদা করবে: কপাল ও নাক, হাতের তালুদ্বয়, হাঁটুদ্বয়, দুই পায়ের অগ্রভাগ। তার বাহুদ্বয় পার্শ্ব থেকে আলাদা রাখবে, স্বীয় বাহুকে যমীনের উপর বিছিয়ে রাখবে না এবং তার আঙ্গুলের মাথা কিবলামুখী করে রাখবে।
১৪- সিজদার মধ্যে সে তিনবার বলবে: “সুবহানা রব্বিয়াল আ‘লা”, আর যদি দু‘আ হিসেবে “সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী” বৃদ্ধি করে, তবে তা উত্তম।
১৫- তারপরে সিজদা থেকে “আল্লাহু আকবার” বলে উঠে দাঁড়াবে।
১৬- তারপরে তার বাম পায়ের উপরে ভর করে বসবে, আর ডান পা উচুঁ করে রাখবে। তার ডান হাত স্বীয় ডান হাঁটুর দিকে উরুর শেষ প্রান্তে রাখবে। কনিষ্ট ও অনামিকা আঙ্গুলদ্বয় আঁটকে রাখবে এবং শাহাদাত আঙ্গুল দু‘আর সময়ে নাড়াতে থাকবে, মধ্যমা আঙ্গুলের সাথে বৃদ্ধাঙ্গুলিকে বৃত্তের ন্যায় সংযুক্ত রাখবে। এবং বাম হাত স্বীয় বাম হাঁটুর দিকে উরুর শেষ প্রান্তে আঙ্গুলগুলো বিছিয়ে রাখবে।
১৭- আর দুই সিজদার মাঝখানে বৈঠকে বলবে: رب اغفر لي، وارحمني، واهدني، وارزقني، واجبرني، وعافني[রব্বিগফিরলী, ওয়ারহামনী, ওহদিনী, ওয়ারযুকনী, ওয়াজবুরনী ও ‘আ-ফিনী], “হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন, আমাকে রহমত করুন, আমাকে হিদায়াত দিন, আমাকে রিযিক দিন, আমাকে বিপদমুক্ত করুন এবং আমাকে ক্ষমা করুন।”
১৮- তারপরে প্রথম সিজদাতে বলা দু‘আ ও কাজগুলির ন্যায় দ্বিতীয় সিজদা করবে,এবং সিজদার সময়ে তাকবীর বলবে।
১৯- তারপরে “আল্লাহু আকবার” বলে দ্বিতীয় সিজদা থেকে উঠে দাঁড়াবে। এরপরে কথা ও কাজে প্রথম রাকাতের ন্যায় দ্বিতীয় রাকাতও আদায় করবে, তবে ইস্তিফতাহের দু‘আ পড়বে না।
২০- দ্বিতীয় রাকাতের শেষে বলবে: “আল্লাহু আকবার”, আর সে দুই সিজদার মাঝখানে যেমন বৈঠক করেছিল, ঠিক অনুরুপ বৈঠক করবে।
২১- এবং এ বৈঠকে সে তাশাহহুদ পাঠ করবে। এভাবে বলবে: "التحيات لله، والصلوات والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله، اللهم صَلِّ على محمد، وعلى آل محمد، كما صليت على إبراهيم، وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد، كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم، إنك حميد مجيد أعوذ بالله من عذاب جهنم، ومن عذاب القبر، ومن فتنة المحيا والممات، ومن فتنة المسيح الدجال " “মৌখিক, শারিরীক ও আর্থিক সমস্ত ইবাদাত আল্লাহর জন্যই নিবেদিত। হে নবী! আপনার উপরে সালাম, আল্লাহর রহমত ও বরকত নাযিল হোক। আমাদের উপরে এবং আল্লাহর নেককার বান্দাদের উপরে সালাম বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপরে এবং মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে সালাত (রহমত) বর্ষণ করুন, যেভাবে ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে আপনি সালাত (রহমত) বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদের উপরে এবং মুহাম্মাদের পরিবারের উপরে বরকত নাযিল করুন, যেভাবে ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিবারের উপরে আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত মর্যাদাবান। আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি জাহান্নামের আযাব থেকে, কবরের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনা থেকে।” তারপরে স্বীয় রবের কাছে নিজের পছন্দ মত দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানের জন্য কল্যাণকর দু‘আ করবে।
২২- তারপরে “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে ডানদিকে সালাম ফিরাবে এবং বামদিকেও অনুরূপ (সালাম) ফিরাবে।
২৩- যদি সালাত তিন অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয়ে থাকে, তাহলে সে প্রথম তাশাহহুদের উপরে সীমিত রাখবে, তথা أشهد أن لا إله إلا الله، وأشهد أن محمداً عبده ورسوله “আশহাদু… ওয়া রসূলুহু”, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।”
২৪- তারপরে “আল্লাহু আকবার” বলে উঠে দাঁড়াবে। এবং ঐ সময়ে তার দুই হাত কাঁধ বরাবর উত্তোলন করবে।
২৫- তারপরে দ্বিতীয় রাকাতের ন্যায় বাকী রাকাতগুলো আদায় করবে, তবে শুধু সূরা ফাতিহাটুকু পড়বে।
২৬- তারপরে তাওয়াররুক পদ্ধতিতে বৈঠক করবে, তথা: নিতম্বের উপরে ভর করে বাম পা ডান পায়ের নিচ দিয়ে বের করে বসবে, তারপরে প্রথম তাশাহহুদে তার দুই হাত যেভাবে উরুর উপরে রেখেছিল, সেভাবে রাখবে।
২৭- এ বৈঠকে পুরো তাশাহহুদ পড়বে।
২৮- তারপরে “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলে ডানদিকে সালাম ফিরাবে এবং বামদিকেও অনুরূপ (সালাম) ফিরাবে।
উত্তর: তিনবার «أَسْـتَغْفِرُ الله» তথা আস্তাগফিরুল্লাহ বলবে।
«اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلامُ وَمِنْكَ السَّلامُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلالِ وَالإِكْرَامِ» “হে আল্লাহ আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি, আপনি রবকতময়, হে মহিমান্বিত ও সম্মানের অধিকারী।”
لا إلهَ إلاّ اللّهُ وحدَهُ لا شريكَ لهُ، لهُ المُـلْكُ ولهُ الحَمْد، وهوَ على كلّ شَيءٍ قَدير، اللّهُـمَّ لا مانِعَ لِما أَعْطَـيْت، وَلا مُعْطِـيَ لِما مَنَـعْت، وَلا يَنْفَـعُ ذا الجَـدِّ مِنْـكَ الجَـد “আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। [বিশাল] রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসা তাঁরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা দান করেন, তা রোধ করার ক্ষমতা কারো নেই, আর আপনি যা রোধ করেন, তা প্রদানকারী কেউই নেই। কোন সম্পদশালীর সম্পদ আপনার কোন উপকার করতে পারে না।”
لا إلهَ إلاّ الله، وحدَهُ لا شريكَ لهُ، لهُ الملكُ ولهُ الحَمد، وهوَ على كلّ شيءٍ قدير، لا حَـوْلَ وَلا قـوَّةَ إِلاّ بِاللهِ، لا إلهَ إلاّ الله، وَلا نَعْـبُـدُ إِلاّ إيّـاه، لَهُ النِّعْـمَةُ وَلَهُ الفَضْل وَلَهُ الثَّـناءُ الحَـسَن، لا إلهَ إلاّ الله مخْلِصـينَ لَـهُ الدِّينَ وَلَوْ كَـرِهَ الكـافِرون ““আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। [বিশাল] রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসা তাঁরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। তাকে ছাড়া আমরা আর কারো ইবাদত করি না, তাঁরই যাবতীয় নি‘আমাত, তাঁরই যাবতীয় অনুগ্রহ এবং তাঁরই যাবতীয় সু-প্রশংসা। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁরই ইবাদত করি, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।”
سُـبْحانَ اللهِ তথা: “সুবহানাল্লাহ” তেত্রিশ বার।
الحَمْـدُ لله তথা: “আলহামদুলিল্লাহ” তেত্রিশ বার।
اللهُ أكْـبَر তথা: “আল্লাহু আকবার” তেত্রিশ বার।
এরপরে একশত বার পূরণার্থে পড়বে: لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير ““আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই তিনি একক। তাঁর কোন শরীক নেই। [বিশাল] রাজত্ব তাঁরই। প্রশংসা তাঁরই। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
- ফজর ও মাগরিবের পরে সূরা আল-ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস তিনবার আর অন্যান্য সালাতের পরে একবার করে পাঠ করবে।
- এবং একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে।
উত্তর: ফজরের পূর্বে দুই রাকাত ।
যোহরের আগে চার রাকাত।
যোহরের পরে দুই রাকাত।
মাগরিবের পরে দুই রাকাত।
ইশার পরে দুই রাকাত।
এর ফযীলত সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: من صلى في اليوم والليلة اثنتي عشرة ركعة تطوعاً بنى الله له بيتاً في الجنة “যে ব্যক্তি দিন-রাতে ১২ রাকাত (অতিরিক্ত) সালাত আদায় করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ী তৈরী করবেন।” ইমাম আহমাদ, মুসলিম ও অন্যান্যরা এটি বর্ণনা করেছেন।
উত্তর: জুমু‘আর দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة فيه خلق آدم وفيه قبض وفيه النفخة وفيه الصعقة فأكثروا علي من الصلاة فيه فإن صلاتكم معروضة علي তোমাদের দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমু‘আর দিন। এ দিনে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, এ দিনে তার রূহ কবয করা হয়েছিল, এ দিনেই শিঙ্গাতে ফুঁক দেওয়া হবে, আর এ দিনেই বিকট শব্দ করা হবে। সুতরাং তোমরা আমার উপরে বেশী বেশী করে দরুদ পড়; কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা করা হয়ে থাকে।” রাবী বলেছেন: তারা বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মারা গেলে আপনার কাছে কিভাবে দরুদ পেশ করা হবে - তারা বললেন: মাটিতে মিশে যাবেন-? তখন তিনি বললেন: إن الله عَزَّ وَجَلَّ حرم على الأرض أجساد الأنبياء “নিশ্চয় আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্লা নবীদের দেহ গ্রাস করাকে যমীনের উপরে হারাম করে দিয়েছেন।” এটি আবূ দাঊদ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন।
উত্তর: মুকীম, জ্ঞানসম্পন্ন, বালেগ প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরযে আইন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: يَٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَوةِ مِن يَوۡمِ ٱلۡجُمُعَةِ فَٱسۡعَوۡاْ إِلَى ذِكۡرِ ٱللَّهِ وَذَرُواْ ٱلۡبَيۡعَۚ ذَلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ “হে ঈমানদারগণ ! জুমু’আর দিনে যখন সালাতের জন্য ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্বরণে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।” [সূরা আল-মুনাফিকুন, আয়াত: ০৯]
উত্তর: শরয়ী উযর ব্যতীত জুমু‘আর সালাতে অনুপস্থিত থাকা জায়িয নেই। এ মর্মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য এসেছে: من ترك ثلاث جمع تهاونا بها؛ طبع الله على قلبه “যে ব্যক্তি তিনটি জুমু‘আহ অলসতা বশত পরিত্যাগ করে; তাহলে আল্লাহ তার অন্তরের উপর মোহর মেরে দেন।” এটি আবূ দাঊদ ও অন্যরা বর্ণনা করেছেন।
উত্তর: সিয়াম হচ্ছে: নিয়তের সাথে ফজর উদিত হওয়া থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত করা।
সিয়াম দুই প্রকার:
ফরয (আবশ্যক) সিয়াম: যেমন রমাদ্বান মাসের সিয়াম, এটি ইসলামের রুকনসমুহ হতে একটি রুকন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ “হে মুমিনগণ ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পার।” (১৮৩) [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৩]
আবশ্যক নয় এমন সিয়াম: যেমন: প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহষ্পতিবারে সিয়াম পালন করা, প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করা আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে আইয়ামে বীদ তথা প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম পালন।
উত্তর: আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ما من عبد يصوم يومًا في سبيل الله، إلا باعد الله بذلك اليوم وجهه عن النار سبعين خريفًا “যে কোন বান্দা আল্লাহর রাস্তায় একদিন সিয়াম পালন করবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ তার চেহারাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে অবস্থান করাবেন।” মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি।
سبعين خريفًا (সাব‘ঈনা খরীফা) শব্দটির অর্থ: সত্তর বছর।
উত্তর: হজ্জ হচ্ছে: নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট আমলের দ্বারা বাইতুল হারামের (যিয়ারত করার) প্রতি ইচ্ছা পোষন করার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদাত পালন করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ “এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৯৭]
উত্তর: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: من حج لله فلم يرفث ولم يفسق؛ رجع كيوم ولدته أمهمن حج لله فلم يرفث ولم يفسق؛ رجع كيوم ولدته أمه “যে ব্যক্তি হজ পালন করল এবং (তাতে) কোনো অশ্লীল কাজ করল না ও পাপাচার করল না, সে ব্যক্তি ঠিক ঐ দিনকার মত (নিষ্পাপ হয়ে) বাড়ি ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।” বুখারী ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ এটি বর্ণনা করেছেন।
“যেমন তার মাতা তাকে প্রসব করার দিনে (নিষ্পাপ) ছিল।” এর অর্থ হচ্ছে: কোন পাপ ছাড়া তথা নিষ্পাপ।
উত্তর: ইসলাম প্রচার-প্রসারে শ্রম ও প্রচেষ্টা ব্যয় করা, ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা অথবা ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ “আর তোমরা তোমাদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর। সেটিই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা তা জেনে থাক।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৪১]।