আকীদাহ অংশ
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলা আসমানে, ‘আরশের উপরে, সকল মাখলূকাতের উপর। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى “রহমান ‘আরশের উপর উঠেছেন।” [সূরা ত্ব-হা, আয়াত: ০৫] তিনি আরও বলেছেন: وَهُوَ ٱلۡقَاهِرُ فَوۡقَ عِبَادِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡحَكِيمُ ٱلۡخَبِيرُ “আর তিনিই আপন বান্দাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণকারী,আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবহিত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৮]
উত্তর: এর অর্থ: আল্লাহ তা‘আলা জগতের জন্য তাকে সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন।
সুতরাং আমাদের ওয়াজিব হবে:
১. তিনি যা আদেশ করেছেন, তার আনুগত্য করা।
২. তিনি যেসব সংবাদ দিয়েছেন, তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা।
৩. তার অবাধ্য না হওয়া।
৪. তিনি যা শরী‘আত সম্মত করেছেন, তার বাইরে আল্লাহর ইবাদাত না করা। আর এটি হচ্ছে: সুন্নাহকে অনুসরণ ও বিদ‘আতকে বিসর্জন দেওয়ার মাধ্যমে।
আল্লাহ বলেছেন: مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ “যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহরই আনুগত্য করবে।...” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০], আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আরো বলেছেন: وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى 3 إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى “আর তিনি নিজের পক্ষ হতে কোন কথা বলেন না, তা কেবলই ওহী যা তার প্রতি প্রেরণ করা হয়েছিল।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩-৪] আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেছেন: لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا “অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ, তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]
উত্তর: ১) তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ: আর তা হলো এ কথার বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলাই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, মালিক এবং পরিচালক, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই।
২) তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ: আর তা হলো ইবাদাতে আল্লাহকে একক গণ্য করা, সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করা যাবে না।
৩) তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত: আর তা হলো: কোন ধরণের নমুনা নির্ধারণ, সাদৃশ্য প্রদান ও নিষ্ক্রিয়করণ ব্যতীত কুরআন ও সুন্নাহতে আগত আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ ও গুণাবলীর প্রতি ঈমান আনা।
তিন প্রকার তাওহীদের দলীল: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: رَّبُّ ٱلسَّمَـوَ تِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا بَيۡنَهُمَا فَٱعۡبُدۡهُ وَٱصۡطَبِرۡ لِعِبَـدَتِهِۦۚ هَلۡ تَعۡلَمُ لَهُۥ سَمِيًّا “তিনি আসমানসমূহ, যমীন ও তাদের অন্তর্বর্তী যা কিছু আছে, সে সবের রব। কাজেই তাঁরই ইবাদাত করুন এবং তাঁর ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাকুন, আপনি কি তাঁর সমনাম ও গুণ সম্পন্ন কাউকেও জানেন?” [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৬৫]
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলার সাথে শিরক করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রটনা করে।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
উত্তর: শিরক হচ্ছে: ইবাদতের প্রকারসমূহ যে কোন একটি ইবাদত গাইরুল্লাহর জন্য করা।
শিরকের প্রকারভেদ:
শিরকে আকবার (বড় শিরক): যেমন: আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য ডাকা, আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা ছাড়া অন্যকে সিজদাহ করা অথবা আল্লাহ আয্যা ও জাল্লা ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে যবাই করা।
শিরকে আসগার (ছোট শিরক): যেমন: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা, তামীমাহ (তাবিজ) ঝুলানো, অর্থাৎ, কল্যাণ লাভ বা অকল্যাণ প্রতিরোধে মানুষ যে সব বস্তু ঝুলায়।আর সামান্য লৌকিকতা (রিয়া), যেমন: কোন ব্যক্তি তার সালাতকে সুন্দর করে, এ কারণে যে মানুষ তার দিক তাকাচ্ছে।
উত্তর: একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কেউই গায়েব (অদৃশ্যের খবর) জানে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَـوَ تِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ وَمَا يَشۡعُرُونَ أَيَّانَ يُبۡعَثُونَ “বলুন! ‘আল্লাহ্ ব্যতীত আসমান ও জমিনের কেউই গায়েব জানে না এবং তারা উপলব্ধিও করেনা কখন তাদেরকে উত্থিত করা হবে।’ [সূরা আন-নামল, আয়াত: ৬৫]
উত্তর: ১. আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান।
২. তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি ঈমান।
৩. তাঁর (আসমানী) কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান।
৪. তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান।
৫. আখিরাত বা শেষ দিবসের প্রতি ঈমান।
৬. তাকদীরের ভালো ও মন্দের প্রতি ঈমান আনা।
দলীল: ইমাম মুসলিম বর্ণিত হাদীসে জিবরীল (আলাইহিস সালাম), যেখানে জিবরীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: «فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ، قَالَ: أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ».
“আপনি ঈমান সম্পর্কে আমাকে সংবাদ দিন। তখন তিনি বললেন: ‘তুমি আল্লাহর প্রতি, তাঁর মালায়েকা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, আখিরাত দিবস ও তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনবে।”
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনা:
তুমি এ কথা বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তা‘আলাই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তোমাকে রিযিক দিয়েছেন। আর তিনিই সমস্ত মাখলূকের একমাত্র (একচ্ছত্র) মালিক ও মহাপরিচালক।
আর তিনিই মা‘বূদ (উপাস্য), তিনি ছাড়া কোন প্রকৃত মা‘বূদ নেই।
আর তিনিই বড় মহান, পরিপূর্ণ যার জন্যই সকল প্রশংসা। তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ ও সুউচ্চ সিফাত বা গুণাবলী। তাঁর কোন সমকক্ষ নেই এবং কোন কিছুই তাঁর সমতুল্য নয়। তিনি পবিত্র।
ফিরিশগণের প্রতি ঈমান:
ফিরিশতাগণ সৃষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নূর থেকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর ইবাদাত করা ও আদেশের পরিপূর্ণ আনুগত্য করার জন্য।
- তাদের মধ্যে অন্যতম জিবরীল আলাইহিস সালাম, যিনি নবীদের নিকট অহী নিয়ে অবতরণ করেন।
কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান:
যে কিতাবগুলো আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের ওপর নাযিল করেছেন।
- যেমন: কুরআন: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর।
- ইনজিল: ঈসা আলাইহিস সালামের উপর।
- তাওরাত: মূসা আলাইহিস সালামের উপরে।
- যাবূর: দাঊদ আলাইহিস সালামের উপরে।
সুহুফে ইবরাহীম এবং মূসা: ইবরাহীম ও মূসা আলাইহিমাস সালামের উপর।
রাসূলগণের প্রতি ঈমান:
তারা হচ্ছেন যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের নিকট প্রেরণ করেছেন, তাদের শিক্ষা দেওয়া, জান্নাত ও কল্যাণের সুসংবাদ দেওয়া এবং তাদেরকে মন্দ ও জাহান্নাম থেকে সতর্ক করার জন্য।
- নবীদের অন্যতম হচ্ছেন: উলুল ‘আঝম প্রত্যয়ীগণ (দৃঢ় সিদ্ধান্তে অধিকারী), তারা হচ্ছেন:
নূহ আলাইহিস সালাম,
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম,
মূসা আলাইহিস সালাম,
ঈসা আলাইহিস সালাম,
এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান:
এটি হচ্ছে: মৃত্যুর পর কবরে, কিয়ামাতের দিবসে এবং পুনরুত্থান ও হিসাবের দিবসে যা হবে, সেখানে জান্নাতীগণ তাদের স্থানে আর জাহান্নামীগণ জাহান্নামে তাদের স্থানে অবস্থান করবে।
তাকাদীরের ভালো ও মন্দের প্রতি ঈমান আনা:
তাকদীর: এটি হচ্ছে এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস করা যে, বিশ্বজগতে ঘটিত সবকিছু আল্লাহ জানেন, আর তিনি তা লাউহে মাহফূযে লিখে রেখেছেন, আর তিনি সেগুলোকে অস্তিত্বে আনা এবং সৃষ্টি করাকে চেয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقۡنَـٰهُ بِقَدَر “নিশ্চয় আমরা প্ৰত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাপে।” [সূরা আল-ক্বমার, আয়াত: ৪৯]।
- তাকদীরের প্রতি ঈমানের চারটি স্তর রয়েছে:
প্রথম স্তর: আল্লাহ তা‘আলার ইলম: এর মধ্যে রয়েছে - প্রতিটি বস্তু অস্তিত্বশীল হওয়ার আগে এবং পরে উক্ত বস্তু সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার পূর্ব জ্ঞান।
এর দলীল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামাতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪]।
দ্বিতীয় স্তর: আল্লাহ তা‘আলা সেগুলোকে লাউহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ করেছেন। সুতরাং যা কিছু ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে ঘটবে, তা তাঁর কাছে কিতাবে লিখিত রয়েছে।
এর দলীল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَعِنْدَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُبِينٍ “আর গায়েবের চাবি তাঁরই কাছে রয়েছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারসমূহে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত রয়েছেন, তাঁর অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৯]
তৃতীয় স্তর: প্রতিটি বস্তু আল্লাহর চাওয়াতেই সংঘটিত হয়, কোন বস্তু বা সৃষ্ট তাঁর চাওয়া ছাড়া সংঘটিত হয় না।
এর দলীল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَسْتَقِيمَ وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ “তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে চলতে চায়, তার জন্য। আর তোমরা ইচ্ছে করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছে করেন।” [সূরা আত-তাকভীর: ২৮-২৯]
চতুর্থ স্তর: এ ব্যাপারে ঈমান আনা যে, সমগ্র সৃষ্টিজগত মাখলূক, যাকে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন। তিনি এগুলোর সত্তা, বৈশিষ্ট্য, নড়াচড়া এবং জগতের মধ্যে বিদ্যমান সব কিছুই সৃষ্টি করেছেন।
এর দলীল আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ “অথচ আল্লাহ্ই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা সৃষ্টি করেছেন।” [সূরা আস-সফফাত: ৯৬]
উত্তর: দীনের মধ্যে মানুষ যা নতুন করে তৈরী করেছে; নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীগণের যুগে তা ছিল না, এমন প্রতিটি কাজ।
*আমরা বিদ‘আতকে প্রত্যাখ্যান করব, গ্রহণ করব না।
কেননা নবী আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম বলেছেন: كل بدعة ضلالة “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী।” এটি আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন।
বিদ‘আতের উদাহরণ: ইবাদাতের মধ্যে কোন কিছু বৃদ্ধি করা, যেমন: ওযুর মধ্যে বৃদ্ধি করা তথা: (অঙ্গসমূহ) চতুর্থবার ধৌত করা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিনে অনুষ্ঠান করা; যেহেতু এগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের থেকে বর্ণিত নয়।
মিত্রতা (الولاء): এটি হচ্ছে: মুমিনদেরকে ভালোবাসা এবং তাদের সহযোগিতা করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ... “আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু...।” [সূরা আত-তাওবাহ: ৭১]
শত্রুতা (البراء): এটি হচ্ছে: কাফিরদের ঘৃণা করা এবং তাদের সাথে শত্রুতা করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ “অবশ্যই তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ‘ইবাদাত কর তা হতে আমরা সম্পর্কমুক্ত। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শক্ৰতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহতে ঈমান আন।” [সূরা আল-মুমতাহিনাহ: ৪]
উত্তর: ইসলাম ছাড়া আল্লাহ অন্য কোন দীন বা ধর্মকে গ্রহণ করবেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: وَمَن یَبتَغِ غَیرَ ٱلإِسلَـٰمِ دِینا فَلَن یُقبَلَ مِنهُ وَهُوَ فِی ٱلـَٔاخِرَةِ مِنَ ٱلخَـٰسِرِینَ “আর কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইলে তা কখনো তার পক্ষ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।” [সূরা আলে-ইমরান: ৮৫]
উত্তর: কথার উদাহরণ: মহাপবিত্র আল্লাহ গালি দেয়া এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি-গালাজ করা।
কাজের উদাহরণ: (কুরআনের) মুসহাফকে অসম্মান করা অথবা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কাউকে সিজদাহ করা।
বিশ্বাসের উদাহরণ: এমন বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়াও কেউ ইবাদাতের উপযুক্ত রয়েছে অথবা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা আছে।
উত্তর:
১- বড় নিফাক (النفاق الأكبر): এটি হচ্ছে: অন্তরে কুফুরী গোপন রেখে ঈমান প্রকাশ করা।
আর এটি ইসলাম থেকে মানুষকে বের করে দেয়। আর এটিই একটি বড় কুফর।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: إِنَّ ٱلمُنَـٰفِقِینَ فِی ٱلدَّركِ ٱلأَسفَلِ مِنَ ٱلنَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُم نَصِیرًا “মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্নতমস্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য আপনি কখনো কোন সহায় পাবেন না।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৪৫]
২- ছোট নিফাক (النفاق الأصغر):
যেমন: মিথ্যাকথা বলা, ওয়াদার খেলাফ করা এবং আমানতের খিয়ানত করা।
এ ধরণের নিফাক ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। এটি গোনাহের কাজ, আর যার মধ্যে এটি থাকবে তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: آية المنافق ثلاث: إذا حدث كذب، وإذا وعد أخلف، وإذا اؤتمن خان “মুনাফিকদের নিদর্শন তিনটি : যখন সে কথা বলবে মিথ্যা বলবে, যখন সে ওয়াদা করবে ভঙ্গ করবে আর যখন তাকে আমানতদার মানা হবে খিয়ানত করবে।” এটি বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
উত্তর: তিনি হচ্ছেন: নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ “মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন; তবে আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী। আর আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-আহযাব: ৪০] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: وأنا خاتم النبيين لا نبي بعدي “আমিই সর্বশেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী নেই।” এটি আবূ দাউদ, তিরমিযী ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন।
উত্তর: সাহাবী: প্রত্যেক এমন ব্যক্তি, যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার প্রতি ঈমান অবস্থায় দেখেছেন এবং ইসলামের উপরে (থাকা অবস্থায়) মারা গিয়েছেন।
- আমরা তাদেরকে ভালোবসাবো এবং অনুসরণ করবো, নবীগণের পরে তারাই অতি উত্তম ও সম্মানি মানুষ।
তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছেন: চার খলীফা:
আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু,
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু,
উছমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু।
উত্তর: মুমিনদের স্থায়ী বাসস্থান হলো জান্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ... “নিশ্চয় যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত...।” [সূরা মুহাম্মাদ,আয়াত: ১২]
উত্তর: ভয়: আল্লাহ তা‘আলাকে এবং তাঁর আযাবকে ভয় করা।
আশা: এটি হচ্ছে আল্লাহর সাওয়াব, ক্ষমা ও রহমতের আশা করা।
এর দলীল হলো আল্লাহ তা‘আলার বাণী: أُولَئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَى رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا “তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো তাদের রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে কত নিকটতর হতে পারে, আর তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার রবের শাস্তি ভয়াবহ।” [সূরা আল-ইসরা: ৫৭] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন: نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ 49 وَأَنَّ عَذَابِي هُوَ الْعَذَابُ الْأَلِيمُ “আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয় আমিই পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর নিশ্চয় আমার শাস্তিই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” [সূরা আল-হিজর: ৪৯-৫০]
উত্তর: আল্লাহ (الله): এর অর্থ হচ্ছে: প্রকৃত উপাস্য, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই।
রব (الرب): তথা: সৃষ্টিকর্তা, মালিক, রিযিকদাতা ও পরিচালনাকারী তিনি একক, সুমহান সত্তা।
মহাশ্রবণকারী ( السميع): যার শ্রবণ সব কিছুকে পরিব্যপ্ত করেছে, বিচিত্রতা ও বিভিন্নতা থাকা সত্তেও যিনি প্রতিটি শব্দই শুনেন।
মহাদ্রষ্টা (البصير): যিনি প্রতিটি জিনিস দেখেন, এবং প্রতিটি বস্তু ছোট হোক অথবা বড় তিনি তা প্রত্যক্ষ করেন।
মহাজ্ঞানী (العليم): তিনি হচ্ছেন এমন সত্তা, যার জ্ঞান অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রতিটি বস্তুকেই আয়ত্ব করেছে।
রহমান (الرحمن): যার রহমত প্রতিটি মাখলূক ও জীবকে পরিব্যপ্ত করেছে। সুতরাং সকল বান্দা ও মাখলূক তার রহমতের আওতায়।
রিযিকদাতা (الرزاق): যার ওপর সমস্ত প্রাণী, মানুষ, জীন ও সমস্ত মাখলূকের রিযিকের দায়িত্ব
চিরঞ্জীব (الحي): এমন চিরঞ্জীব, যিনি কখনো মরবেন না। আর সমস্ত সৃষ্টি মরবে।
সুমহান (العظيم): যার নাম, গুণাবলী ও কর্মসমূহে রয়েছে সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতা ও পরিপূর্ণ মহত্ব।
উত্তর: আমরা তাদের ভালোবাসবো, মাসআলা ও শরয়ী সমসাময়িক বিষয়ে তাদের শরণাপন্ন হব, তাদের ভালো দিকগুলো তুলে ধরব। আর যে এগুলো ছাড়া তাদের মন্দগুলো আলোচনা করবে, সে বিপথের ওপর আছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُوا ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَـٰتۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِير “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ্ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।” [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ১১]
উত্তর: ঈমান নেককাজের মাধ্যমে বাড়ে এবং পাপের মাধ্যমে কমে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ “মুমিন তো তারাই, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ০২]
সৎকাজ (المعروف:): এটি হচ্ছে, প্রতিটি ইবাদত আল্লাহ তা‘আলার জন্য করার আদেশ। আর অসৎকাজ (المنكر): এটি হচ্ছে: আল্লাহর জন্য প্রতিটি মন্দ কাজ থেকে বারণ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ ... “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য যাদের বের করা হয়েছে; তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে, অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে...।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১১০]
উত্তর: তারা হচ্ছেন, কথা, কাজ ও আকীদাহর (বিশ্বাসের) দিক থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ যার ওপর ছিলেন, তারা তার উপরেই থাকেন।
তাদের আহলুস সুন্নাহ নামকরণ করা হয়; কারণ তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করেন এবং বিদ‘আতকে পরিহার করেন।
ওয়াল জামা‘আহ: কেননা তারা হকের উপর একত্রিত এবং তাতে পরষ্পর আলাদা হননি।