তাফসীর অংশ
উত্তর: সূরা ফাতিহা এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ “রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।” (১) الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ “সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই প্ৰাপ্য।” (২) الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ “পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।” (৩) مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ “বিচার দিনের মালিক।” (৪) إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ “আমরা শুধু আপনারই ‘ইবাদাত করি, এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি” (৫) اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ “আমাদেরকে সরল-সুদৃঢ় পথের হিদায়াত দিন।” (৬) صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ “তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নি‘আমাত দিয়েছেন, যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।” (৭) [আল-ফাতিহা: ১-৭]
তাফসীর:
সূরাটির নাম আল-ফাতিহা; যেহেতু এর দ্বারা আল্লাহর কিতাব শুরু করা হয়েছে।
১- بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ “রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে” অর্থাৎ আমি কুরআন পাঠ শুরু করছি আল্লাহ তা‘আলার নামে, তাঁর সাহায্য কামনা এবং তাঁর নাম উচ্চারণের মাধ্যমে বরকত লাভের আশায়।
الله “আল্লাহ” তথা: প্রকৃত ইবাদাতপ্রাপ্তির হকদার, আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে এ নামে নামকরণ করা যায় না।
{الرَّحْمَن} বা “আর-রহমান” তথা: প্রশস্ত রহমতের মালিক, যে রহমত সকল কিছুকে পরিবেষ্টিত করেছে।
{الرَّحِيم} “আর-রহীম” তথা: মুমিনদের জন্য বিশেষ রহমতের মালিক।
২- الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ “সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই প্ৰাপ্য।” অর্থাৎ সকল প্রকার প্রশংসা এবং পূর্ণতা শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই নির্দিষ্ট।
৩- الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ “পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।” অর্থাৎ প্রশস্ত রহমতের মালিক, যে রহমত সকল কিছুকে পরিবেষ্টিত করেছে এবং মুমিনদের কাছে বিশেষভাবে পৌঁছানো রহমতের মালিক।
৪- مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ “বিচার দিনের মালিক।”: এটি হচ্ছে কিয়ামাতের দিন।
৫- إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ “আমরা শুধু আপনারই ‘ইবাদাত করি, এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” অর্থাৎ একমাত্র আপনারই ইবাদাত করি, আর আপনার কাছেই শুধু সাহায্য চাই।
৬- اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ “আমাদেরকে সরল-সুদৃঢ় পথের হিদায়াত দিন।”: এটা হচ্ছে: ইসলাম ও সুন্নাহর দিকে হিদায়াত (পথের দিশা)।
৭- صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ “তাদের পথ, যাদেরকে আপনি নি‘আমাত দিয়েছেন, যাদের উপর আপনার ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়।” তথা: নবীগণ ও তাদের অনুসারী আল্লাহর সৎ বান্দাদের পথ, যেটি ইহুদী ও নাসারাদের পথ নয়।
- এ সূরাটি পাঠ করার পরে “আমীন” বলা সুন্নাত। “হে আল্লাহ আমাদের দু‘আ কবুল করুন।”
উত্তর: সূরা যিলযাল এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا: “যখন প্ৰবল কম্পনে যমীন প্ৰকম্পিত করা হবে, (১) وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا: আর যমীন তার ভার বের করে দেবে, (২) وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا: আর মানুষ বলবে, ‘এর কী হল?’ (৩) يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا: সেদিন যমীন তার বৃত্তান্ত বৰ্ণনা করবে, (৪) بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَى لَهَا: কারণ আপনার রব তাকে নির্দেশ দিয়েছেন, (৫) يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ: সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে; যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখান যায়, (৬) فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ: “কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা দেখতে পাবে। (৭) وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ: আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলে সে তাও দেখবে।” (৮) [সূরা যিলযাল: ১-৮]
তাফসীর:
১- إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا: “যখন প্ৰবল কম্পনে যমীন প্ৰকম্পিত করা হবে,”: যখন প্রচণ্ডভাবে যমীনকে নাড়ানো (প্রকম্পিত করা) হবে, যা কিয়ামাতের দিনে সংঘটিত হবে।
২- وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا: “আর যমীন তার ভার বের করে দেবে,”: অর্থাৎ যমীন তা অভ্যন্তরে থাকা মৃতব্যক্তি ও অন্যান্য সকল বস্তু বের করে দেবে।
৩- وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا: আর মানুষ বলবে, ‘এর কী হল?’: মানুষ তখন দিশেহারা হয়ে বলবে: যমীনের কী হল যে, এটা এমন অস্থির ও নড়াচড়া করছে?
৪- وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا: আর মানুষ বলবে, ‘এর কী হল?’: সেই মহাদিনে যমীন তার উপরে কৃত সকল ভালো-মন্দের ব্যাপারে সংবাদ দিয়ে দেবে।
৫- بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَى لَهَا: “কারণ আপনার রব তাকে নির্দেশ দিয়েছেন, “: যেহেতু আল্লাহ তাকে তা জানিয়ে দিবেন এবং তা প্রকাশের জন্য তাকে আদেশ দিবেন।
৬- يَوْمَئِذٍ يَصْدُرُ النَّاسُ أَشْتَاتًا لِيُرَوْا أَعْمَالَهُمْ: “সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে; যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখান যায়,“: সেই মহাদিনে যমীন যখন প্রকম্পিত হবে, মানুষ তার হিসাবের স্থান থেকে বিভিন্ন দলে দলে বের হয়ে যাবে, যাতে তারা দুনিয়াতে যা কাজ করেছিল তা পরষ্পরকে প্রদর্শন করতে পারে।
৭- فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ: “কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা দেখতে পাবে,“: সুতরাং যার একেবারে ক্ষুদ্র একটি পিঁপড়া পরিমাণ ভালো এবং নেকীর কাজ থাকে, সে তার সামনে তা দেখতে পাবে।
৮- وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ: “আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলে সে তাও দেখবে।”: আর যে ব্যক্তির উক্ত পরিমাণ কোন মন্দকাজ থাকবে, সে তার সামনে সেটিকে দেখতে পাবে।
উত্তর: সূরা আল-‘আদি‘আত এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
وَالْعَادِيَاتِ ضَبْحًا: “শপথ ঊর্ধশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির। (১) فَالْمُورِيَاتِ قَدْحًا: অতঃপর যারা ক্ষুরের আঘাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের বিচ্ছুরন ঘটায়। (২) فَالْمُغِيرَاتِ صُبْحًا: অতঃপর যারা অভিযান চালায় প্রভাতকালে। (৩) فَأَثَرْنَ بِهِ نَقْعًا: ফলে তারা তা দ্বারা ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে। (৪) فَوَسَطْنَ بِهِ جَمْعًا: তারপরে তা দ্বারা তারা শত্রুদের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। (৫) إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُودٌ: নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ। (৬) وَإِنَّهُ عَلَى ذَلِكَ لَشَهِيدٌ: আর নিশ্চয় সে নিজেই এ বিষয়ের সাক্ষী। (৭) وَإِنَّهُ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيدٌ: আর সে নিশ্চয় ধন-সম্পদের আসক্তিতে প্রবল। (৮) أَفَلَا يَعْلَمُ إِذَا بُعْثِرَ مَا فِي الْقُبُورِ: তবে কি সে জানে না, যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে। (৯) وَحُصِّلَ مَا فِي الصُّدُورِ: আর অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে। (১০) إِنَّ رَبَّهُمْ بِهِمْ يَوْمَئِذٍ لَخَبِيرٌ: নিশ্চয় তাদের রব সেদিন তাদের ব্যাপারে সবিশেষ অবহিত।” (১১) [সূরা আল-‘আদি‘আত: ১-১১]
তাফসীর:
১- وَالْعَادِيَاتِ ضَبْحًا: “শপথ ঊর্ধশ্বাসে ধাবমান অশ্বরাজির।”: আল্লাহ তা‘আলা এমন ঘোড়ার কসম করেছেন, যা এমনভাবে ছুটে চলে, যাতে তারা তাদের নিজেদের ক্ষিপ্রতার সাথে ছুটে চলার শব্দ শুনতে পায়।
২- فَالْمُورِيَاتِ قَدْحًا: “অতঃপর যারা ক্ষুরের আঘাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের বিচ্ছুরন ঘটায়।”: তিনি আরো এমন ঘোড়ার শপথ করেছেন, যারা তাদের পা সজোরে পাথরের উপরে পড়ায় ক্ষুরের মাধ্যমে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
৩- فَالْمُغِيرَاتِ صُبْحًا: “অতঃপর যারা অভিযান চালায় প্রভাতকালে।” তিনি এরপরে এমন ঘোড়ার কসম করেছেন, যারা ভোরে শত্রুদের উপরে আক্রমন চালায়।
৪- فَأَثَرْنَ بِهِ نَقْعًا: “ফলে তারা তা দ্বারা ধূলি উৎক্ষিপ্ত করে।”: যারা তাদের ছুটে চলার মাধ্যমে ধূলিকণা উড়িয়ে দেয়।
৫- فَوَسَطْنَ بِهِ جَمْعًا: “তারপরে তা দ্বারা তারা শত্রুদের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে।“: যারা তাদের আরোহীদের নিয়ে শত্রুদের মধ্যভাগে প্রবেশ করে।
৬- إِنَّ الْإِنْسَانَ لِرَبِّهِ لَكَنُودٌ: “নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ।”: নিশ্চিতভাবে মানুষ তার রব তার জন্য যে কল্যাণের বস্তু নিহিত রেখেছে, তা অস্বীকারকারী।
৭- وَإِنَّهُ عَلَى ذَلِكَ لَشَهِيدٌ: “আর নিশ্চয় সে নিজেই এ বিষয়ের সাক্ষী।”: উক্ত কল্যাণ অস্বীকারের ব্যাপারে সে নিজেই প্রত্যক্ষদর্শী। আর এটি অত্যন্ত স্পষ্ট হওয়ার কারণে সে তা প্রত্যাখ্যানও করতে পারে না।
৮- وَإِنَّهُ لِحُبِّ الْخَيْرِ لَشَدِيدٌ: “আর সে নিশ্চয় ধন-সম্পদের আসক্তিতে প্রবল।”: আর তার সম্পত্তির প্রতি আসক্তির কারণে তা নিয়ে কৃপণতা করে।
৯-أَفَلَا يَعْلَمُ إِذَا بُعْثِرَ مَا فِي الْقُبُورِ: “তবে কি সে জানে না, যখন কবরে যা আছে তা উত্থিত হবে।”: দুনিয়া নিয়ে ধোকায় পড়ে থাকা এ মানুষ কি জানে না যে, যখন আল্লাহ তা‘আলা কবরে থাকা সকল বস্তুকে উত্থিত করবেন এবং তাদেরকে হিসাব ও প্রতিদান দেওয়ার জন্য যমীন থেকে বের করে আনবেন, তখন তারা যেমন ধারণা করেছিল প্রকৃত বিষয় কখনোই তেমন হবে না।
১০-وَحُصِّلَ مَا فِي الصُّدُورِ: “আর অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে।”: প্রকাশিত হবে এবং বর্ণিত হবে, নিয়ত, বিশ্বাস ও অন্যান্য যা কিছু তাদের অন্তরে রয়েছে।
১১-إِنَّ رَبَّهُمْ بِهِمْ يَوْمَئِذٍ لَخَبِيرٌ: “নিশ্চয় তাদের রব সেদিন তাদের ব্যাপারে সবিশেষ অবহিত।”: নিশ্চয়ই তাদের রব তাদের উক্ত দিনের ব্যাপারে সম্যক অবহিত। তাঁর কাছে স্বীয় বান্দার কোন কিছুই গোপন নেই, আর সে অনুযায়িই তিনি তাদেরকে অচিরেই পুরষ্কৃত করবেন।
উত্তর: সূরা আল-ক্বারি‘আহ এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
الْقَارِعَةُ: “ভীতিপ্ৰদ মহা বিপদ (১) مَا الْقَارِعَةُ : ভীতিপ্ৰদ মহা বিপদ কী? (২) وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ: আর ভীতিপ্ৰদ মহা বিপদ সম্পর্কে আপনাকে কিসে জানাবে? (৩) يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ: সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত। (৪) وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوشِ: আর পর্বতসমূহ হবে ধুনিত রঙ্গিন পশমের মত। (৫) فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ: অতঃপর যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে। (৬) فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ: সে তো থাকবে সন্তোষজনক জীবনে। (৭) وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ: আর যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে। (৮) فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ: তার স্থান হবে ‘হাওয়িয়াহ’। (৯) وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ: আর আপনাকে কিসে জানাবে সেটা কী? (১০) نَارٌ حَامِيَةٌ: অত্যন্ত উত্তপ্ত আগুন।” (১১) [সূরা আল-ক্বারি‘আহ: ১-১১]
তাফসীর:
১- الْقَارِعَةُ: “ভীতিপ্ৰদ মহাবিপদ।”: যখন তার ভয়াবহতার কারণে মানুষের হৃদয়সমূহ আঘাতপ্রাপ্ত হবে?
২- مَا الْقَارِعَةُ : “ভীতিপ্ৰদ মহাবিপদ কী?”: সেই সময়টি আসলে কী, যখন তার ভয়াবহতার কারণে মানুষের হৃদয়সমূহ আঘাতপ্রাপ্ত হবে?
৩- وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْقَارِعَةُ: “আর ভীতিপ্ৰদ মহাবিপদ সম্পর্কে আপনাকে কিসে জানাবে?”: হে রাসূল! কোন বস্তু আপনাকে সে বিষয়ে অবহিত করবে যে, সেই সময়টি আসলে কী, যখন তার ভয়বহতার কারণে মানুষের হৃদয়সমূহ কেপে উঠবে? নিশ্চিতভাবে সেটি হচ্ছে কিয়ামাতের দিন।
৪- يَوْمَ يَكُونُ النَّاسُ كَالْفَرَاشِ الْمَبْثُوثِ: “সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মত।”: সেটি এমন একটি দিন, যেদিন মানুষের অন্তরসমূহ প্রকম্পিত হতে থাকবে আর তারা তেমনি হবে, যেমনভাবে কীট-প্রত্যঙ্গগুলো এখানে সেখানে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত আকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে।
৫- وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوشِ: “আর পর্বতসমূহ হবে ধুনিত রঙ্গিন পশমের মত।”: সেদিন দ্রুত চলাচল ও নড়াচড়ার কারণে পাহাড়-পর্বতসমূহ ধুনাই করা পশমের ন্যায় হয়ে যাবে।
৬- فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ: “অতঃপর যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে।”: তখন যার সৎকাজসমূহ তার পাপকাজের উপরে প্রাধান্য পাবে।
৭- فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ: “সে তো থাকবে সন্তোষজনক জীবনে।”: সে এক সন্তোষজনক জীবনের মধ্যে থাকবে, যা সে জান্নাতে লাভ করবে।
৮- وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ: “আর যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে।”: পক্ষান্তরে যার পাপকাজ তার সৎকাজের উপরে প্রাধান্য পাবে।
৯- فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ: “তার স্থান হবে ‘হাওয়িয়াহ’।”: কিয়ামাতের দিনে তার অবস্থান ও বাসস্থান হবে জাহান্নাম।
১০- وَمَا أَدْرَاكَ مَا هِيَهْ: “আর আপনাকে কিসে জানাবে সেটা কী?”: হে রাসূল! সেটি আসলে কী এ ব্যাপারে আপনাকে কোন বস্তু অবহিত করবে?
১১- نَارٌ حَامِيَةٌ: “অত্যন্ত উত্তপ্ত আগুন।”: সেটি হচ্ছে চূড়ান্ত উত্তপ্ত আগুন।
উত্তর: সূরা আত-তাকাছুর এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ “প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাবিষ্ট করে রাখে। (১) حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ যতক্ষণ না তোমরা কবরের সাক্ষাত পাও। (২) كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ কখনোই না, তোমরা অচিরেই জানতে পারবে। (৩) ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ অতপর কখনোই না, তোমরা অচিরেই জানতে পারবে। (৪) كَلَّا لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ কখনোই নয়, যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানে জ্ঞান রাখতে। (৫) لَتَرَوُنَّ الْجَحِيمَ অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখতে পাবে। (৬) ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ তারপর তোমরা সেটি দেখতে পাবে চাক্ষুস প্রত্যয়ে। (৭) ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ তারপর সেদিন তোমরা অবশ্যই নি‘আমাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (৮) [সূরা আত-তাকাছুর: ১-৮]
তাফসীর:
১- أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ “প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাবিষ্ট করে রাখে।”: হে মানুষ, তোমাদের সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদ নিয়ে পারষ্পারিক গর্ববোধ আল্লাহর আনুগত্য থেকে তোমাদেরকে ব্যস্ত করে রেখেছে।
২- حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ “যতক্ষণ না তোমরা কবরের সাক্ষাত পাও।”: তথা যতক্ষণ না তোমরা মারা যাবে এবং তোমাদের কবরে প্রবেশ করবে।
৩- كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ “কখনোই না, তোমরা অচিরেই জানতে পারবে।”: এ সকল বিষয়ে পারষ্পারিক গর্ব তোমাদেরকে আল্লাহর আনুগত্য হতে ব্যস্ত করে রেখেছে, অচিরেই তোমরা জানতে পারবে উক্ত বিষয়ে ব্যস্ত থাকার পরিণাম সম্পর্কে।
৪- ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ “অতপর কখনোই না, তোমরা অচিরেই জানতে পারবে।”: তারপরে তোমরা তার পরিণাম সম্পর্কে অচিরেই জানতে পারবে।
৫- كَلَّا لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ “কখনোই নয়, যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানে জ্ঞান রাখতে।”: প্রকৃতপক্ষে তোমরা যদি নিশ্চিতভাবে জানতে যে, তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি নিয়ে পরষ্পরে গর্বে মশগুল থাকার কারণে তোমাদের উক্ত কাজের বিনিময়ে প্রতিদান দিবেন।
৬- لَتَرَوُنَّ الْجَحِيمَ “অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখতে পাবে।”: আর আল্লাহর কসম, অবশ্যই তোমরা কিয়ামাতের দিনে (জাহান্নামের) আগুন প্রত্যক্ষ করবে।
৭- ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ “তারপর তোমরা সেটি দেখতে পাবে চাক্ষুস প্রত্যয়ে।”: তারপরে অবশ্যই তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসের সাথে তা প্রত্যক্ষ করবে, যাতে কোন সন্দেহ নেই।
৮- ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ “তারপর সেদিন তোমরা অবশ্যই নি‘আমাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”: তারপরে আল্লাহ তা‘আলা সেদিনে তোমাদেরকে অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে যে সব নি‘আমাত দিয়েছেন, যেমন: সুস্থতা, ধন-সম্পদ ও ইত্যাদির ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।
উত্তর: সূরা আল-‘আসর এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
وَالْعَصْرِ: “সময়ের শপথ,” (১) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ: “নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মাঝে নিপতিত,” (২) إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ: “কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আর পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে হকের এবং উপদেশ দিয়েছে সবরের।” (৩) [সূরা আল-‘আসর: ১-৩]
তাফসীর:
১- وَالْعَصْرِ: “সময়ের শপথ,”: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সময়ের শপথ করেছেন।
২- إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ: “নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মাঝে নিপতিত,” তথা: প্রতিটি মানুষই ক্ষতি ও ধংসের মধ্যে নিপতিত রয়েছে।
৩- إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ: “কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আর পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে হকের এবং উপদেশ দিয়েছে সবরের।”: তবে যারা ঈমান এনেছে এবং ভালোকাজ করেছে, এবং সেই সাথে হকের দিকে দাও‘আত দিয়েছে এবং তার উপরে ধৈর্য ধারন করেছে, তারা এসব ক্ষতি থেকে পরিত্রাণপ্রাপ্ত।
উত্তর: সূরা আল-হুমাযাহ এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ “দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পিছনে ও সামনে লোকের নিন্দা করে। (১) الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ যে সম্পদ জমায় ও তা বার বার গণনা করে। (২) يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ সে ধারণা করে যে, তার সম্পদ তাকে অমর করে রাখবে। (৩) كَلَّا لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়। (৪) وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ আর হুতামা সম্পর্কে আপনাকে কোন বস্তু অবহিত করবে? (৫) نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন। (৬) الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ যা হৃদয়কে গ্ৰাস করবে। (৭) إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ নিশ্চয় এটা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে। (৮) فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে। (৯)” [সূরা আল-হুমাযাহ: ১-৯]
তাফসীর:
১- وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ “দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পিছনে ও সামনে লোকের নিন্দা করে।” : ধ্বংস ও শক্ত আযাব রয়েছে ঐ সমস্ত লোকের জন্য যারা বেশী বেশী মানুষদের গীবত করে এবং তাদের ব্যাপারে কথা আরোপ করে।
২- الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ “যে সম্পদ জমায় ও তা বার বার গণনা করে।”: যার মূল চিন্তাই হচ্ছে ধন-সম্পদ জমা করা এবং তা গুণে রাখা, আর এছাড়া তার অন্য কোন চিন্তাও থাকে না।
৩- يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ “সে ধারণা করে যে, তার সম্পদ তাকে অমর করে রাখবে।”: সে ধারণা করে যে তার জমা করা সম্পদ তাকে মৃত্যু থেকে নিষ্কৃতি দেবে, আর তাতে সে দুনিয়াতে স্থায়ী হয়ে থাকবে।
৪- كَلَّا لَيُنْبَذَنَّ فِي الْحُطَمَةِ “কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়।”: এ মূর্খ যেমন চিন্তা করে, প্রকৃত বিষয় কখনো তেমন নয়, বরং অবশ্যই তাকে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামের আগুনে, যে আগুন তার প্রচন্ড শক্তিবলে তার মধ্যে নিক্ষিপ্ত প্রতিটি বস্তুকে ভেঙ্গে চুরে পিষে ফেলবে।
৫- وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْحُطَمَةُ “আর হুতামা সম্পর্কে আপনাকে কোন বস্তু অবহিত করবে?”: হে রাসূল, আপনাকে কোন বস্তু অবহিত করবে যে, স্বীয় অভ্যন্তরে নিক্ষিপ্ত প্রতিটি বস্তুকে ধ্বংস করে ফেলা এ আগুন প্রকৃতপক্ষে কেমন?
৬- نَارُ اللَّهِ الْمُوقَدَةُ “এটা আল্লাহর প্রজ্বলিত আগুন।”: নিশ্চয় এটি হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার জ্বলন্ত আগুন।
৭- الَّتِي تَطَّلِعُ عَلَى الْأَفْئِدَةِ “যা হৃদয়কে গ্ৰাস করবে।”: যা মানুষের শরীর থেকে অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করবে।
8- إِنَّهَا عَلَيْهِمْ مُؤْصَدَةٌ “নিশ্চয় এটা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে।”: নিশ্চয় এটি শাস্তিপ্রাপ্তদেরকে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখবে।
৯- فِي عَمَدٍ مُمَدَّدَةٍ “দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।”: প্রলম্বিত সুদীর্ঘ খুঁটিসমূহের মাধ্যমে, যাতে তারা সেখান থেকে বের হতে না পারে।
উত্তর: সূরা আল-ফীল এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ “আপনি কি দেখেননি, আপনার রব হাতির অধিপতিদের প্রতি কী করেছিলেন? (১) أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ তিনি কি তাদের কৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে দেননি? (২) وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ আর তাদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পাঠান। (৩) تَرْمِيهِمْ بِحِجَارَةٍ مِنْ سِجِّيلٍ যারা তাদের উপর শক্ত পোড়ামাটির কঙ্কর নিক্ষেপ করে। (৪) فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَأْكُولٍ অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণ-সদৃশ করেন।” (৫) [সূরা আল-ফীল: ১-৫]
তাফসীর:
১- أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ “আপনি কি দেখেননি, আপনার রব হাতির অধিপতিদের প্রতি কী করেছিলেন?”: হে রাসূল, আপনি কি জানেন না যে, আপনার রব আবরাহা এবং তার সহচর তথা হাতির অধিপতিরা যখন তারা কা‘বাকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করেছিল, তাদের সাথে কী (আচরণ) করেছিলেন?
২- أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ “তিনি কি তাদের কৌশল ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে দেননি?“: তাদের কা‘বা ধ্বংস করার উক্ত জঘন্য প্রচেষ্টাকে আল্লাহ তা‘আলা ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে দিয়েছেন। সুতরাং তারা মানুষকে কা‘বা থেকে ফিরিয়ে রাখার যে আশা করেছিল, তা ব্যহত হয়েছিল, এমনকি তারা সামান্যতম সফলও হতে পারেনি।
৩- وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ “আর তাদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পাঠান।”: এবং তিনি তাদের উপরে ঝাঁক ঝাঁক পাখি প্রেরণ করেছিলেন।
৪- تَرْمِيهِمْ بِحِجَارَةٍ مِنْ سِجِّيلٍ “যারা তাদের উপর শক্ত পোড়ামাটির কঙ্কর নিক্ষেপ করে।”: পাখিরা তাদের উপরে পাথরাকৃতির (শক্ত) মাটির কঙ্কর নিক্ষেপ করেছিল।
৫- فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَأْكُولٍ “অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণ-সদৃশ করেন।”: সুতরাং আল্লাহ তাদেরকে এমন রোপিত বৃক্ষের পাতা এবং শীষের ন্যায় করে ধ্বংস করেছেন, যাকে পশুপ্রাণী খেয়ে ফেলেছে।
উত্তর: সূরা কুরাইশ ও তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
لِإِيلَافِ قُرَيْشٍ “কুরাইশের আসক্তির কারণে, (১) إِيلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ তাদের আসক্তি আছে শীত ও গ্ৰীষ্মে সফরের। (২) فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ অতএব, তারা যেন ইবাদাত করে এ ঘরের রবের। (৩) الَّذِي أَطْعَمَهُمْ مِنْ جُوعٍ وَآمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٍ যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় খাদ্য দিয়েছেন এবং ভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন।” (৪) [সূরা কুরাইশ: ১-৪]
তাফসীর:
১- لِإِيلَافِ قُرَيْشٍ “কুরাইশের আসক্তির কারণে,” : এর দ্বারা উদ্দেশ্যে হচ্ছে- তাদের শীতকাল ও গ্রীষ্মকালে সফরের প্রতি যে অত্যন্ত আকর্ষণ ছিল।
২-إِيلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ তাদের আসক্তি আছে শীত ও গ্ৰীষ্মে সফরের: নিরাপত্তার সাথে শীতকালে ইয়ামেনে একটি সফর আর গ্রীষ্মকালে শামে আরেকটি সফর করা।
৩- فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ “অতএব, তারা ইবাদাত করুক এ ঘরের রবের।”: তারা যেন শুধুমাত্র এ পবিত্র ঘরের রবের ইবাদাত করে, যিনি তাদের জন্য এ সফরকে সহজ করে দিয়েছেন এবং তার সাথে যেন শিরক না করে।
৪- الَّذِي أَطْعَمَهُمْ مِنْ جُوعٍ وَآمَنَهُمْ مِنْ خَوْفٍ “যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় খাদ্য দিয়েছেন এবং ভীতি থেকে তাদেরকে নিরাপদ করেছেন।”: আরবদের অন্তরে হারাম শরীফের যে মর্যাদাবোধ এবং তাদের অবস্থানের মর্যাদার মাধ্যমে যিনি তাদেরকে ক্ষুধার সময়ে খাদ্য দিয়েছেন আর তাদেরকে ভীতির সময়ে নিরাপদ রেখেছেন।
উত্তর: সূরা আল-মা‘ঊন এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ “আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে দ্বীনকে অস্বীকার করে? (১) فَذَلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ সে তো সে-ই, যে ইয়াতীমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। (২) وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ আর সে উদ্বুদ্ধ করে না মিসকীনদের খাদ্য দানে। (৩) فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ কাজেই দুর্ভোগ সে সালাত আদায়কারীদের, (৪) الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন, (৫) الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে, (৬) وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ এবং মাউন প্ৰদান করতে বিরত থাকে।” (৭) [সূরা আল-মা‘ঊন: ১-৭]
তাফসীর:
১- أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ “আপনি কি দেখেছেন তাকে, যে দ্বীনকে অস্বীকার করে?”: আপনি কি চেনেন ঐ ব্যক্তিকে যে কিয়ামাতের দিনের প্রতিদানকে অস্বীকার করে?
২- فَذَلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ “সে তো সে-ই, যে ইয়াতীমকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়।”: সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে ইয়াতিমকে তার প্রয়োজন থেকে কঠোরতার দ্বারা বিদূরিত করে।
৩- وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ “আর সে উদ্বুদ্ধ করে না মিসকীনদের খাদ্য দানে।”: দরিদ্রকে খাবার দেওয়ার ব্যাপারে সে নিজেকেও যেমন উৎসাহিত করে না, আবার অন্যকেও সে ব্যাপারে উৎসাহিত করে না।
৪- فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ “কাজেই দুর্ভোগ সে সালাত আদায়কারীদের,”: সালাত আদায়কারীদের জন্য রয়েছে ধ্বংস ও আযাব।
৫- الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ “যারা তাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন,”: যারা সালাত সম্পর্কে অমনোযোগী, তারা সালাতের ওয়াক্ত চলে যায় অথচ তারা কোন ভ্রুক্ষেপ করে না।
৬- الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ “যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে,”: যারা তাদের সালাত ও আমলগুলো প্রদর্শন করে থাকে, তারা আমলের ক্ষেত্রে আল্লাহর জন্য ইখলাস রক্ষা করে না।
৭- وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ “এবং মাউন প্ৰদান করতে বিরত থাকে।”: তারা অন্যদেরকে এমন সাহায্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকে, যা প্রদানে তাদের কোন ক্ষতি হয় না।
উত্তর: সূরা আল-কাউছার এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ “নিশ্চয় আমরা আপনাকে কাউছার দান করেছি। (১) فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ কাজেই আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন। (২) إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ নিশ্চয় আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নির্বংশ।” (৩) [সূরা আল-কাউছার: ১-৩]
তাফসীর:
১- إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ “নিশ্চয় আমরা আপনাকে কাউছার দান করেছি।”: হে রাসূল, আমি আপনাকে দিয়েছি অসংখ্য কল্যাণ, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: জান্নাতের মধ্যে কাউছারের নহর।
২- فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ “কাজেই আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।”: সুতরাং মুশরিকরা যেভাবে মূর্তির উদ্দেশ্যে যবেহের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ করার প্রচেষ্টা চালায়, তার বিপরীতে শুধুমাত্র তাঁর উদ্দেশ্যেই সালাত আদায় ও যবেহ করার মাধ্যমে আল্লাহর এ সব নি‘আমাতের উপরে শুকরিয়া আদায় করুন।
৩- إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ “নিশ্চয় আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নির্বংশ।”: অবশ্যই আপনার শত্রু সব ধরণের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত, সে বিস্মৃত হবে, যদিও তাকে স্মরণ করা হয়, তবে মন্দত্বের মাধ্যমেই তাকে স্মরণ করা হবে।
উত্তর: সূরা আল-কাফিরূন এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ “বলুন, হে কাফিররা! (১) لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ আমি তার ইবাদাত করি না যার ইবাদাত তোমরা কর, (২) وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ এবং তোমরাও তার ইবাদতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি, (৩) وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ এবং আমি ইবাদতকারী নই তার যার ইবাদাত তোমরা করে আসছ। (৪) وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ এবং তোমরাও তার ইবাদতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি, (৫) لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আর আমার দ্বীন আমার।” (৬) [সূরা আল-কাফিরূন: ১-৬]
তাফসীর:
১- قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ “বলুন, হে কাফিররা!”: হে রাসূল, আপনি বলুন: হে আল্লাহকে অস্বীকারকারী কাফিরগণ!
২- لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ “আমি তার ইবাদাত করি না যার ইবাদাত তোমরা কর,”: তোমরা যে সমস্ত মূর্তিপুজার ইবাদাত কর, বর্তমানেও আমি তাদের ইবাদাত করি না আর ভবিষ্যতেও করব না।
৩- وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ এবং তোমরাও তার ইবাদতকারী নও যার ইবাদত আমি করি, : আবার তোমরাও আমি যার ইবাদাত করি, সেই এক আল্লাহর ইবাদাতকারী নও।
৪- وَلَا أَنَا عَابِدٌ مَا عَبَدْتُمْ এবং আমি ইবাদতকারী নই তার যার ইবাদাত তোমরা করে আসছ। : আর তোমরা যে সকল মূর্তিপূজার ইবাদাত করেছ, আমি সেগুলোর ইবাদাতকারী নই।
৫- وَلَا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ এবং তোমরাও তার ইবাদতকারী নও যার ইবাদত আমি করি, : আবার তোমরাও আমি যার ইবাদাত করি, সেই এক আল্লাহর ইবাদাতকারী নও।
৬- لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ “তোমাদের দ্বীন তোমাদের, আর আমার দ্বীন আমার।”: তোমাদের জন্য সেই দীনই থাকুক, যা তোমরা নিজেদের জন্য তৈরী করেছ। আর আমার জন্য রয়েছে সেই দীন, যা আল্লাহ আমার উপরে নাযিল করেছেন।
উত্তর: সূরা আল-নাসর এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় (১) وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন। (২) فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا তখন আপনি আপনার রবের প্ৰশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।” (৩) [সূরা আন-নাসর: ১-৩]
তাফসীর:
১- إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়।” : হে রাসূল, যখন আপনার দীনের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা আসবে আর মক্কা বিজয় সংঘটিত হবে।
২- وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا “আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।”: আপনি দলের পরে দল মানুষকে ইসলামে প্রবেশ করতে দেখবেন।
৩- فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا “তখন আপনি আপনার রবের প্ৰশংসাসহ তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন, নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।”: সুতরাং আপনি জেনে রাখুন, সেটি হচ্ছে আপনাকে যে দায়িত্ব সহকারে প্রেরণ করা হয়েছিল, সে দায়িত্ব সমাপ্ত হওয়ার আলামত। আর তাই আপনি আপনার রবের তাসবীহ পাঠ করুন এবং তাঁর সাহায্য ও বিজয় দানের নি‘আমাতের কারণে শুকরিয়া জ্ঞাপন করুন। আর আপরি তাঁর কাছ থেকে মাগফিরাত কামনা করুন। তিনিই বান্দার তাওবা কবূল করেন এবং তাদেরকে ক্ষমা করেন।
উত্তর: সূরা আল-মাসাদ (সূরা লাহাব) এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ “ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুহাত এবং ধ্বংস হয়েছে সে নিজেও। (১) مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ তার ধন-সম্পদ ও তার উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। (২) سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ অচিরে সে দগ্ধ হবে লেলিহান আগুনে, (৩) وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ আর তার স্ত্রীও- যে ইন্ধন বহন করে, (৪) فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ তার গলায় পাকানো রশি।”(৫) [সূরা আল-মাসাদ: ১-৫]
তাফসীর:
১- تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ “ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দুহাত এবং ধ্বংস হয়েছে সে নিজেও।” : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আবু লাহাব ইবনু আব্দিল মুত্তালিবের দুটি হাত তার আমলের কারণে ধ্বংস হয়েছে; যেহেতু সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দিত; কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।
২- مَا أَغْنَى عَنْهُ مَالُهُ وَمَا كَسَبَ “তার ধন-সম্পদ ও তার উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি।”: কোন বস্তু তাকে উক্ত ধ্বংস থেকে রক্ষা করবে- তার সম্পদ ও সন্তান? না, তারা কখনোই তার আযাব বা শাস্তিকে ফেরাতে পারবে না। আর তার জন্য কোন রহমতও নিয়ে আসতে পারবে না।
৩- سَيَصْلَى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ “অচিরে সে দগ্ধ হবে লেলিহান আগুনে,”: সে কিয়ামাতের দিন প্রজ্জ্বলিত শিখাবিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে, যার উত্তাপ হবে প্রচণ্ড।
৪- وَامْرَأَتُهُ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ “আর তার স্ত্রীও- যে ইন্ধন বহন করে,”: আর তার স্ত্রী উম্মু জামীলও সেখানে প্রবেশ করবে, কেননা সেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পথে কাঁটা বিছিয়ে রেখে কষ্ট দিত।
৫- فِي جِيدِهَا حَبْلٌ مِنْ مَسَدٍ “তার গলায় পাকানো রশি।”: তার ঘাড়/গলাতে ভালভাবে পাকানো রশি থাকবে, যার মাধ্যমে তাকে জাহান্নামের আগুনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে।
উত্তর: সূরা আল-ইখলাস এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়, (১) اللَّهُ الصَّمَدُ আল্লাহ হচ্ছেন সামাদ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী); (২) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি, (৩) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।” (৪) [সূরা আল-ইখলাস: ১-৪]
তাফসীর:
১- قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ “বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়,”: হে রাসূল, আপনি বলুন: তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই।
২- اللَّهُ الصَّمَدُ “আল্লাহ হচ্ছেন সামাদ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী);”: যার কাছে সৃষ্টিজগতের প্রয়োজনসমূহ উপস্থিত করা হয়।
৩- لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ “তিনি কাউকেও জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি,”: সুমহান পবিত্র সত্তা তিনি, যার কোন সন্তানও নেই আর নেই কোন পিতাও।
৪- وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ “এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।”: আর তার সৃষ্টির মধ্য হতে কোন বস্তুই তাঁর মত নয়।
উত্তর: সূরা আল-ফালাক এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের (১) مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে, (২) وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়, (৩) وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ আর অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা গিরায় ফুক দেয়, (৪) وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।” (৫) [সূরা আল-ফালাক: ১-৫]
তাফসীর:
১- قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের।”: হে রাসূল, আপনি বলুন: আমি সকালের রবের কাছে আশ্রয় ও নিরাপত্তা চাচ্ছি।
২- مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ “তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে,”: মাখলূকের মধ্য থেকে যে সব বস্তু কষ্ট দেয়, তার অকল্যাণ থেকে।
৩- وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ “আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়,”: এছাড়াও আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এমন সব অকল্যাণ থেকে, যার অনিষ্টতা রাতে প্রকাশ পায়, যেমন: চোর ও বিভিন্ন প্রাণী হতে আগত অকল্যাণ।
৪- وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ “আর অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা গিরায় ফুক দেয়,”: আমি আল্লাহর কাছে আরো আশ্রয় প্রার্থনা করছি এমন সব যাদু হতে, যা গিঁরাতে ফুঁক দিয়ে করা হয়।
৫- وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ “আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।” : এবং এমন সকল হিংসুক-বিদ্বেষ পোষণকারী হতে, যারা মানুষের প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমাতের ব্যাপারে হিংসা করতে থাকে, তাদের থেকে উক্ত নি‘আমাতের বিলুপ্তি কামনা করে এবং তাদের কষ্টে নিপতিত করে।
উত্তর: সূরা আন-নাস এবং তার ব্যাখ্যা:
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ রহমান ও রহীম আল্লাহর নামে।
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, (১) مَلِكِ النَّاسِ মানুষের অধিপতির, (২) إِلَهِ النَّاسِ মানুষের ইলাহের কাছে, (৩) مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে, (৪) الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, (৫) مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ জিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।” (৬) [সূরা আন-নাস: ১-৬]
তাফসীর:
১- قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ “বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের।”: হে রাসূল, আপনি বলুন: আমি মানুষের রবের কাছে আশ্রয় ও নিরাপত্তা চাচ্ছি।
২- مَلِكِ النَّاسِ “মানুষের অধিপতির,”: যিনি তাদেরকে যেভাবে ইচ্ছা পরিচালনা করেন এবং তিনি ছাড়া আর কোন নিরঙ্কুশ মালিক নেই।
৩- إِلَهِ النَّاسِ “মানুষের ইলাহের কাছে,”: তথা তাদের প্রকৃত মা‘বূদের কাছে, যিনি ছাড়া তাদের সত্য কোন মা‘বূদ নেই।
৪- مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ “আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে,”: এমন শয়তানের অকল্যাণ থেকে থেকে, যে মানুষের মধ্যে কুমন্ত্রণা দেয়।
৫- الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ “যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে,”: যে মানুষের অন্তরের মধ্যে কুমন্ত্রণা প্রবেশ করায়।
৬- مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ “জিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।”: তথা: কুমন্ত্রণাদানকারী মানুষ অথবা জিন উভয়ের মধ্য হতেই হতে পারে।